বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

শিক্ষিত বেকারে জর্জরিত দেশ; সংকটের গভীরতর চিত্র

  • আপলোড তারিখঃ ১৪-০৯-২০২৫ ইং
শিক্ষিত বেকারে জর্জরিত দেশ; সংকটের গভীরতর চিত্র


দেশের শ্রমবাজার এক ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি। বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণসমাজের মধ্যে বেকারত্বের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে, যা দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির জন্য এক বড় অশনিসংকেত। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক শ্রমশক্তি জরিপে এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিই ফুটে উঠেছে। একদিকে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম ক্রমবর্ধমান হারে বেকার থেকে যাচ্ছে, অন্যদিকে শ্রমবাজারে নিরক্ষর কর্মীর সংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ আমাদের মানবসম্পদ এক প্রান্তে দক্ষতা ও শিক্ষার অভাব, আরেক প্রান্তে শিক্ষা ও দক্ষতার ব্যবহারযোগ্যতা না থাকার সংকটে জর্জরিত। স্নাতক ডিগ্রিধারী প্রতি তিনজনের একজন বেকার। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২৯ শতাংশ, যা উদ্বেগজনক। এই প্রতিবেদন থেকে বেশ কয়েকটি গুরুতর দিক উঠে এসেছে। প্রথমত, কর্মসংস্থানের সঙ্গে শিক্ষার মানের বড় ধরনের অসামঞ্জস্য রয়েছে। যে শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি দিচ্ছে, তা কর্মবাজারের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। ফলে বিপুলসংখ্যক তরুণ স্নাতক হয়েও এমন দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না, যা দিয়ে তাঁরা চাকরি পেতে পারেন। দ্বিতীয়ত, কর্মসংস্থানের দিক থেকে অঞ্চলভেদে ব্যাপক বৈষম্য দেখা যাচ্ছে। ঢাকা বিভাগে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি, যেখানে শিক্ষিত তরুণরা মূলত কর্মসংস্থানের খোঁজে ভিড় করেন। এটি স্পষ্ট করে যে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি সুষমভাবে বণ্টিত নয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘ছদ্ম বেকারত্ব’। বিবিএসের সংজ্ঞানুসারে, সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলেই তাকে কর্মে নিয়োাজিত ধরা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এক ঘণ্টার কাজ দিয়ে জীবন ধারণ করা সম্ভব নয়। এমন সংজ্ঞার ফলে প্রকৃত বেকারত্বের চিত্র আড়ালে থেকে যাচ্ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় এক কোটি মানুষ তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাচ্ছে না। এই বিশালসংখ্যক ছদ্ম বেকার দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে না। সবচেয়ে হতাশাজনক দিক হলো, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী প্রায় ৮৫ লাখ তরুণ-তরুণী কোনো ধরনের শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণের মধ্যে নেই। তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। এটি কেবল বেকারত্ব নয়, বরং সামাজিক অস্থিরতাও বাড়াবে। শ্রমবাজারে আয়ের বৈষম্য আরেকটি স্থায়ী সমস্যা। শহরে আয় বেশি হলেও গ্রামে কম, পুরুষরা নারীদের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বেশি আয় করছে। অনানুষ্ঠানিক খাতে ৮৪ শতাংশ কর্মসংস্থান প্রমাণ করে যে বিপুল জনগোষ্ঠী এখনো সামাজিক সুরক্ষা ও ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। অর্থনীতির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, পোশাক খাতে শ্রমিক আন্দোলন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধাক্কা—সব মিলিয়ে বেকারত্ব পরিস্থিতি আরো ঘনীভূত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কেবল বর্তমানের সংকট নয়, বরং ভবিষ্যতের অস্থিতিশীলতারও পূর্বাভাস। এই অবস্থায় করণীয় হলো শিক্ষাকে কর্মসংস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা। দক্ষতা উন্নয়ন, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং শিল্প-সেবা খাতের জন্য বিশেষায়িত মানবসম্পদ তৈরির উদ্যোগ জরুরি। পাশাপাশি নারীদের শ্রমবাজারে সম্পৃক্ত করার জন্য আলাদা নীতি ও সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন। অনানুষ্ঠানিক খাতকে ধীরে ধীরে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে আনা ছাড়া বৈষম্য কমানো সম্ভব নয়।



কমেন্ট বক্স
notebook

দর্শনায় অতিরিক্ত মাইকিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ