বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

নেপালে বিক্ষোভে সরকার পতন

দ্রুত স্থিতি ফিরুক
  • আপলোড তারিখঃ ১১-০৯-২০২৫ ইং
নেপালে বিক্ষোভে সরকার পতন

নেপালে তরুণ প্রজন্মের সর্বাত্মক বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। স্বল্পতম সময়ের বিক্ষোভে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে ব্যাপক। ঘটনাটি বিস্ময়কর, তবে আকস্মিক নয়। এক বছর আগে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট শাসককে উৎখাত করে বাংলাদেশের জেন-জি তারণ্যের শক্তিমত্তা প্রমাণ করে। এ মুহূর্তে ইন্দোনেশিয়ায় চলমান বিক্ষোভে টালমাটাল সরকার। আরো আগে শ্রীলঙ্কায় জনবিস্ফোরণে স্বৈরশাসকের পতন ঘটে। এসব ঘটনা নেপালের তরুণদের উদ্দীপিত করেছে নিঃসন্দেহে। গত সপ্তাহে ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্ম ও বার্তা বিনিময়ের অ্যাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। সরকারের ভাষায় এটি করা হয় ভুয়া ও মিথ্যা খবর, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার এবং অনলাইন জালিয়াতি মোকাবেলার লক্ষ্যে। কিন্তু এতে তরুণসমাজ ক্ষুব্ধ হয়। রাজনীতিকদের দুর্নীতি ইত্যাদির বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ ছিল। সবমিলিয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে যায় দেশের অনেক স্থানে। বিক্ষোভ স্বল্পকালীন হলেও এতে জনগণের ক্ষোভের যে তীব্রতা দেখা গেছে, ততটা বাংলাদেশের বিক্ষোভে দেখা যায়নি। অথচ বাংলাদেশীরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন দীর্ঘ ১৬ বছর। দুর্নীতির ব্যাপকতা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের চেয়ে বেশি। এমনকি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বও হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছিল শেখ হাসিনা সরকার। হাসিনার নির্দেশে মাত্র এক মাসের বিক্ষোভে বাংলাদেশে যে নৃশংসতা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তারপরও বাংলাদেশের বিক্ষোভকারীরা সে অর্থে সহিংসতা ঘটায়নি। নেপালে সহিংসতা ঘটেছে। ক্ষুব্ধ তরুণরা মন্ত্রীদের বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে। আগুনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী নিহত হয়েছেন। একাধিক মন্ত্রী পথে-ঘাটে হেনস্তার শিকার হন। সেখানেও সেনাবাহিনী বাংলাদেশের মতো মন্ত্রী, ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও প্রভাবশালী আমলাদের নিরাপদে রাখার দায়িত্ব নিয়েছে। তবে এসব ঘটনার ইতিবাচক সমাপ্তি কাম্য। সেটি নির্ভর করছে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। নেপালের রাজনীতিতে বিদেশের প্রভাব স্পষ্ট। প্রতিবেশী ভারতের প্রভাব প্রবল। বিক্ষোভের মুখে যে সরকারের পতন হলো সেটি চীনপন্থী অলির নেতৃত্বে হলেও গুরুত্বপূর্ণ শরিক ছিল ভারতপন্থী দল নেপাল কংগ্রেস। বর্তমান বিক্ষোভে দেশটিতে ভারতীয় প্রভাবের অবসান ঘটবে বলে মনে হয়। সেখানে চীনপন্থীরা শক্তিশালী হলেও সাধারণ জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব প্রবল। সেই সাথে আছে রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে অসন্তোষ। সংবিধানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া হলেও সরকার প্রয়োজনে মতামত প্রকাশে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করত। সামাজিকমাধ্যম নিষিদ্ধ করা এর অংশ। এ ছাড়াও সম্প্রতি সরকার গোয়েন্দা বিভাগকে টেলিফোনে আড়িপাতার অধিকার দিয়ে একটি আইন তৈরি করছিল, যা স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার লক্ষণ। এখন দেখার বিষয়, নেপালে কে আসছেন রাষ্ট্র পরিচালনা ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের দায়িত্বে। শোনা যাচ্ছে, কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহের নাম। তিনি বয়সে যুবক। সেই সাথে নেপালি তরুণদের প্রিয় মানুষ। র‌্যাপ সঙ্গীতে রাজনৈতিক সংস্কারের পক্ষে প্রচার চালিয়ে জনপ্রিয়তা পান এবং মেয়র নির্বাচিত হন। দেশটিতে এখন সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে দ্রুততম সময়ে ক্ষমতার পালাবদল ঘটুক, যাতে নেপালে অল্প সময়ের মধ্যে শান্তি ফিরে আসে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমাদের এটিই প্রত্যাশা।



কমেন্ট বক্স
notebook

দর্শনায় অতিরিক্ত মাইকিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ