আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোটে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি (পিআর) করার দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে রাজনীতির মাঠ উত্তাল রয়েছে। ধারাবাহিক কর্মসূচি ও সংলাপ সত্ত্বেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় ৫ দফা দাবিতে তিন দিন বিক্ষোভের পর এবার যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১১ দিনের গণমিছিল কর্মসূচি দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ পাঁচ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দ্বিতীয় দফায় ১১ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কর্মসূচিগুলো হলো-পাঁচ দফা দাবিতে জনমত গঠনের লক্ষ্যে ১ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে গণসংযোগ, ১০ অক্টোবর রাজধানীসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গণমিছিল এবং ১২ অক্টোবর সারাদেশে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম ও হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাইফুল আলম খান, মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল প্রমুখ। জামায়াতের অন্য দাবিগুলো হলো- আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয়কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। এর আগে দাবি আদায়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তিনদিনের কর্মসূচি পালন করে জামায়াত।
১২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা ইসলামী আন্দোলনের:
রাজধানীতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করে তার আলোকে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে দ্বিতীয় ধাপে ১২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। গতকাল মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম দফার কর্মসূচি ঘোষণা করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে ১-১২ অক্টোবর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ধারাবাহিক কর্মসূচি ও সংলাপ সত্ত্বেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন ইউনুছ আহমাদ। তিনি বলেন, ‘জনতার রক্তে গঠিত সরকার জনগণের দাবি উপেক্ষা করলে তার নৈতিক ও আইনগত বৈধতা ক্ষুণ্ন হবে।’
দলের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন, পিআর পদ্ধতিতে ভোট, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি, গণহত্যার বিচার, ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচার ও বিচারকালীন নিষিদ্ধকরণ, ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১ থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত গণসংযোগ, ১০ অক্টোবর ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে গণমিছিল এবং ১২ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
পাঁচ দফা দাবিতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কর্মসূচি:
পাঁচ দফা গণদাবির পক্ষে দেশব্যাপী ব্যাপক জনমত গঠনের লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই সনদের অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, আগামী নির্বাচনে প্রকৃত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা ও জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করা। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনের আমির মাওলানা মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, দেশ আজ ভয়াবহ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত। জনগণের ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করে পুরনো স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। জুলাই সনদের বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করায় জাতি আজ রাজনৈতিক সঙ্কট, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও বিপর্যয়ের গভীর খাদে পতিত হচ্ছে। ইসলামী শক্তিকে দমিয়ে রাখার জন্য পরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে এবং জাতীয় স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে বিদেশি প্রভুদের খুশি করার নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছিড়জনগণের ঈমানি চেতনা ও জুলাই বিপ্লবের গণআকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করার যে কোনো ষড়যন্ত্র জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করা হবে।
ঘোষিত কর্মসূচি হলো- ১. পহেলা অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ব্যাপক গণসংযোগ কর্মসূচি। এসময় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও ৫ দফা গণদাবির পক্ষে মতবিনিময় সভা, গোলটেবিল বৈঠক ও সেমিনারসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে। ২. ১০ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় গণমিছিল। ৩. ১২ অক্টোবর সারাদেশে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি পেশ। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকারকে জনগণের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে সতর্ক করা হবে যে, জনগণের ন্যায্য দাবি পূরণে ব্যর্থ হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। নেতৃদ্বয় বলেন, জুলাই সনদ ও ৫ দফা দাবি কেবল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কর্মসূচি নয়, বরং দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে এদেশের প্রতিটি মানুষের প্রাণের দাবি। এটি স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ইসলামী মূল্যবোধ এবং জনগণের মৌলিক অধিকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একমাত্র পথ।
তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণের দাবিকে অবজ্ঞা করবেন না। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে নতজানু হয়ে জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে দেশকে অনিশ্চয়তার গভীরে ঠেলে দেবেন না। জনগণের ধৈর্যের সীমা শেষ হয়ে গেছে। আমরা হুঁশিয়ার করে দিচ্ছিড়আর কোনো ছলচাতুরি বা কালক্ষেপণের সুযোগ নেই। বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী এবং দেশবাসীকে উক্ত কর্মসূচি সর্বশক্তি দিয়ে বাস্তবায়ন ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের আহ্বান জানান সংগঠনের আমির মাওলানা মামুনুল হক।
সাত দাবি কর্মসূচিতে জাগপা সাত দাবিতে এবার ১২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা। তাদের দাবিগুলো হলো- জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার কার্যকরী পদক্ষেপ, গণহত্যার বিচার, ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তি বাতিল, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল নিষিদ্ধ, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও ভারতীয় প্রভাবমুক্ত নির্বাচন। গতকাল পল্টনস্থ জাগপা ঢাকা মহানগর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জাগপা সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান। এই ৭ দাবি নিয়ে ইতোপূর্বে জাগপা ৩ দিনের কর্মসূচি পালন করেছিল।
রাশেদ প্রধান বলেন, আমেরিকায় সন্ত্রাসী সংগঠন আওয়ামী লীগের হামলা, দেশের মাটিতে তাদের ঝটিকা মিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণ আমাদের সচেতন করেছে। দেশের পার্বত্য অঞ্চলে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের নামে অস্থিরতা সৃষ্টি করার হিন্দুস্তানি-আওয়ামী ষড়যন্ত্র আমাদের মনোবলকে দৃঢ় ক হিন্দুস্তানের দালাল আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টিকে পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশের একটি বৃহৎ দল, যারা ডানের একটু বামে এবং বামের একটু ডানে থাকে, তাদের কার্যক্রম এবং বক্তব্য আমাদের হতাশ করেছে।