বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

মহান বিপ্লবীর বিরোচিত বিদায়, জানাজায় লাখো মানুষ

  • আপলোড তারিখঃ ২১-১২-২০২৫ ইং
মহান বিপ্লবীর বিরোচিত বিদায়, জানাজায় লাখো মানুষ

লাখো মানুষের অংশগ্রহণে জানাজা শেষে অশ্রুসিক্ত বিদায় জানানো হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদিকে। গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া এভিনিউসহ আশপাশের বৃহত্তর এলাকা জুড়ে হয় ওসমান হাদির জানাজা। স্মরণকালের বৃহত্তম এই জানাজায় নানা শ্রেণি-পেশা ও দল-মতের কয়েক লাখ মানুষ অংশ নেন। জানাজার আগে প্রধান উপদেষ্টা, ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব, ও ওসমান হাদির বড় ভাই আবু বকর বক্তব্য দেন। বক্তব্য চলার সময় উপস্থিত লোকজনের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। হাদির জানাজা ঘিরে সকাল থেকেই রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় জনসমাগম শুরু হয়। দুপুরের মধ্যেই লোকারণ্য হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। সংসদ চত্বর, মানিক মিয়া এভিনিউ ছাপিয়ে জনস্রোত ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের বিভিন্ন সড়কে। জানাজায় শরিক হতে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। জানাজার জন্য নির্ধারিত এলাকায় হয় জোহরের জামাত। দুপুর ২টার দিকে শুরু হয় জানাজার আনুষ্ঠানিকতা।


শুরুতে শহীদ ওসমান হাদির জীবনী পড়ে শোনান ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। পরে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বক্তব্য দেন। সবশেষ বক্তব্য দেন শহীদ হাদীর বড় ভাই অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক। তার আবেগঘন বক্তব্যের সময় উপস্থিত লোকজন অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। জানাজার কাতারে দাঁড়ানো লোকজন নানা স্লোগান দিতে থাকেন। পরে আবু বকরের ইমামতিতে অনুষ্ঠিত হয় জানাজার নামাজ। জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। জানাজা শেষে হাদির মরদেহ নিয়ে তার সহকর্মী ও সহযোদ্ধারা রওনা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখে। সেখানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি কমপ্লেক্সে দাফন করা হয় ওসমান হাদিকে।


গতকাল শনিবার সকাল থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ ও সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সরেজমিন দেখা যায়, হাদির নামাজে জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই ভিড় করতে থাকেন বিভিন্ন দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষ। অনেকেই আসেন বিভিন্ন জেলা থেকে। সকাল থেকেই তারা সংসদ ভবন এলাকার সামনের সড়কে অবস্থান নেন। পরে সাড়ে ১১টার দিকে সংসদ ভবনের মূল ফটক খুলে দেয়া হয়। হাদির জানাজার জন্য প্রস্তুত করা হয় মাঠ ও মঞ্চ। সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা মাঠের পশ্চিম প্রান্তে জানাজার জন্য মঞ্চ তৈরি করা হয়। গেট খোলার আগে জনতা ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। শুরুতে জানাজায় অংশগ্রহণকারীদের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে লোকসংখ্যা। জানাজার আগেই ওই মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। এরপর আর তল্লাশি করা সম্ভব হয়নি। নিরাপত্তার ব্যবস্থা ভেঙেই জনতা ঢুকতে থাকেন সংসদ ভবন এলাকায়।
জানাজা ঘিরে খামারবাড়ি ও ধানমণ্ডি এলাকা হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের প্রবেশমুখে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। জানাজার আগে মানিক মিয়া এভিনিউসহ আশপাশের প্রায় সব সড়কে জনস্রোত ছড়িয়ে পড়ে। মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে ধানমণ্ডি ২৭, আসাদ গেট, ফার্মগেট, খামারবাড়ি, বিজয় সরণি সড়কে ছিল মানুষ আর মানুষ। জানাজা শুরুর সময়ও বিভিন্ন সড়ক দিয়ে মানুষকে আসতে দেখা যায়। ওই এলাকায় সমবেত মানুষের কণ্ঠে ছিল নানা স্লোগান। দুপুরের আগে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে হাদির লাশের পোস্টমর্টেম হয়। দুপুর ২টার কিছু আগে সংসদ এলাকায় প্রবেশ করে শহীদ হাদির লাশবাহী গাড়ি। তার লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িটি আসার পরই প্রবেশ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।


জানাজায় প্রথম সারিতে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সাবেক তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজায় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ জামানসহ তিন বাহিনীর প্রধানরাও অংশ নেন।


ওদিকে জানাজা শেষে জনতার একটি অংশ সংসদের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জানাজার পর হাদির লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। জানাজা ফেরত মানুষের তোড়ে সংসদ ভবন ও এর আশপাশের সড়ক স্থবির হয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে এই জুলাইযোদ্ধা হাদির লাশ এসে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান, ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম, জিএসএস এম ফরহাদ, এনসিপি’র মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবেরসহ ওসমান হাদির সহযোদ্ধারা। ওসমান হাদির লাশ কবরে নামান মাহমুদুর রহমান, সাদিক কায়েম, হাসনাত আবদুল্লাহসহ অন্যরা। দাফনের পর উপস্থিত সবাইকে নিয়ে বিকাল ৪টার দিকে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন কবরস্থান গেটের বাইরে অবস্থানরত স্বেচ্ছাসেবী, রাজনৈতিক সহযোদ্ধাসহ উপস্থিত জনতা। হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক মোনাজাত পরিচালনা করেন। এসময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আল্লাহ আমার ভাইয়ের শাহাদত কবুল করুন। আল্লাহ যেন শরীফ ওসমান হাদিকে শহীদ হিসেবে মর্যাদা দেন এবং তার সমস্ত গুনাহ মাফ করেন।


উল্লেখ্য, ঢাকা-৮ আসন থেকে সংসদ নির্বাচন করতে চাওয়া শরীফ ওসমান হাদি গত ১২ই ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রিকশায় থাকা অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে গুরুতর আহত হন। তাকে গুরুতর অবস্থায় নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ১৫ই ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। সেখানে গত ১৮ই ডিসেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। হত্যার প্রতিবাদে এবং বিচার দাবিতে বিক্ষোভ অবরোধ হয় বিভিন্ন স্থানে। শুক্রবার সন্ধ্যায় হাদির মরদেহ দেশে আসে। লাশ রাখা হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘরে।



কমেন্ট বক্স
notebook

দর্শনায় অতিরিক্ত মাইকিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ