পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির কারণে দেশটির পাঞ্জাব ও সিন্ধ প্রদেশ থেকে ইতিমধ্যেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ২১ লাখের বেশি মানুষকে। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) জানিয়েছে, শুধু পাঞ্জাবে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে ২০ লাখের বেশি মানুষ, আর সিন্ধে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে আরও দেড় লাখ মানুষ। এনডিএমএ প্রধান ইনাম হায়দার মালিক সতর্ক করে জানিয়েছেন—বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
দেশজুড়ে মৌসুমি বৃষ্টিপাত এবং নদী উপচে পড়ায় পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি। জুনের শেষ দিক থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৯০০ জনের, জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মেডিকেল কর্পস।
একদিকে পানি, অন্যদিকে মৃত্যু
বন্যায় যারা ঘরছাড়া হয়েছেন, তাদের অনেকেই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বাড়ি ছাড়তে চাননি। অনেক গ্রামে এখনো কেউ কেউ পানির মধ্যে আটকা পড়ে আছেন। উদ্ধারকর্মীরা নৌকা নিয়ে ঘুরে ঘুরে মানুষ ও গবাদিপশু সরিয়ে নিচ্ছেন। তবে নতুন বিপদের নাম হয়েছে এই নৌকা।
সিন্ধু নদীতে গত মঙ্গলবার একটি উদ্ধার নৌকা ডুবে যায়—মৃত্যু হয় ৯ জনের। এর কয়েকদিন আগেই জালালপুর পীরওয়ালায় আরেকটি নৌকাডুবিতে মারা যান ৫ জন। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আরও নৌকা ও হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ত্রাণ এসেছে, পানি কমেনি
বন্যাকবলিত এলাকায় ইতোমধ্যেই পাঠানো হয়েছে টনকে টন ত্রাণসামগ্রী। রয়েছে তাঁবু, কম্বল, খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট। তবুও দুর্গম অনেক অঞ্চলে এখনো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এনডিএমএ প্রধান জানিয়েছেন, “পুরো এলাকা থেকে পানি নামতে আরও কয়েক সপ্তাহ লাগবে। এরপরই শুরু হবে পুনর্বাসন কার্যক্রম।”
আন্তর্জাতিক সহায়তা
বন্যার ভয়াবহতা বাড়তে থাকায় জাতিসংঘ জরুরি সহায়তা হিসেবে পাকিস্তানকে ৫০ লাখ ডলার দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। তারা একদিকে অর্থ সাহায্য করেছে, অন্যদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা টিম পাঠিয়েছে—যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথম এমন সহায়তা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভৌগোলিক বৈচিত্র্য এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। দেশটিতে হিমবাহ গলে তৈরি হওয়া নতুন নতুন হ্রদও নতুন সংকট তৈরি করছে। ভেঙে পড়লে সেগুলো আরও ভয়াবহ প্লাবন ঘটাতে পারে।
অতীতেও ছিল দুঃসহ স্মৃতি
এর আগেও, ২০২২ সালে ভয়াবহ বর্ষণে পাকিস্তানে প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৩ কোটির বেশি মানুষ। এবারের পরিস্থিতিও সেই ট্র্যাজেডিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় পাকিস্তান সরকার ‘জলবায়ু জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ইতোমধ্যে জলবায়ু মোকাবিলায় ৩০০ দিনের রোডম্যাপ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন।
সমীকরণ প্রতিবেদন