নির্বাচন ঠেকাতে ভারতের ষড়যন্ত্রের ফাঁদ!

আপলোড তারিখঃ 2025-10-03 ইং
নির্বাচন ঠেকাতে ভারতের ষড়যন্ত্রের ফাঁদ! ছবির ক্যাপশন:

বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে একদম উঠে-পড়ে লেগেছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে বলে একাধিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সূত্রের দাবি। ভারতের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তাদের বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নানা ইস্যু তৈরি করে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বলে জানিয়েছে একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র। সূত্রগুলোর দাবি- বিভিন্ন রুটে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ নকল কাগজজাত নোট দেশের অভ্যন্তরে ঢুকছে। নোটগুলোর কাগজ, হলোগ্রাম ও নিরাপত্তা সূচক এতটাই নিখুঁত যে সাধারণ নজর, এমনকি অনেক ব্যাংকিং যাচাইযন্ত্রেও এগুলো চিহ্নিত করা দুষ্কর হচ্ছে।


বিশ্বস্ত সূত্রে জানায়, নোটগুলোতে বাংলাদেশের মুদ্রায় ব্যবহৃত কাগজ ও নিরাপত্তা স্তরের সঙ্গে অত্যন্ত মিল রয়েছে। বিশেষ কৌশল ব্যবহার করে একাধিক ব্যাচে এ নকল নোট তৈরির ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং সেগুলো বিশেষভাবে নির্বাচিত মার্কেট-রুট ও স্থানীয় জালনোট চক্রের কাছে অত্যন্ত কম মূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। সীমান্তস্থ কিছু চ্যানেল, অবৈধ পাসিং পয়েন্ট এবং অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এসব নোট অবমুক্ত করা হচ্ছে। সীমান্ত ও নগর এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং ব্যাংকিং নেটওয়ার্ককে সতর্ক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানা যায়। সীমান্ত রক্ষা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সূত্রে পাওয়া তথ্যে- এই ধরনের চক্র যদি সত্যিই সক্রিয় হয়, তাহলে দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য তা ব্যাপক হুমকি সৃষ্টি করবে। বিশাল পরিমাণ জাল অর্থ বাজারে ঢুকলে মুদ্রার আস্থায় ধাক্কা, মূল্যবৃদ্ধি বা অনিয়মজনিত লেনদেনে ব্যাঘাত- সবই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একইসঙ্গে এই অর্থ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও সন্ত্রাসীকরণে ব্যবহার করা হলে তা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা-চিত্র অতি শিগগিরই ঝুঁকিতে ফেলবে।


সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ইতোমধ্যে বিষয়টি গোপনভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সীমান্ত নজরদারি ও কাস্টমস কন্ট্রোলে জোরদার অবস্থান গ্রহণ, ব্যাংকগুলোর কাগজপত্র যাচাই প্রক্রিয়া আপডেট ও অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়েছে। বিশেষায়িত টেকনিক্যাল টিম দিয়ে প্রাপ্ত জাল নোটের বিশ্লেষণ চলছে। পাশাপাশি, জনগণকে এসব নোট গ্রহণে সতর্ক থাকার জন্য প্রচারণা চালানোর কথাও বলা হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের শাখাসমূহকে সতর্ক করে যাচাইয়ের পাশাপাশি গোয়েন্দা বিভাগের নির্দেশনায় বিশেষ চেকপয়েন্ট স্থাপন করেছে। বড় ব্যবসায়ী ও মোকাবিলা কেন্দ্রগুলোকে বিশেষ প্রকৌশলীয় যন্ত্র ও হস্তচালিত যাচাই কিট ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকিং সেক্টরের নিযুক্তরা জানিয়েছেন- রিস্ক কন্ট্রোল ইউনিটগুলোকে আরো সক্রিয় করে তুলতে নোঙ্গর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।


কাতারভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মদতে বিভিন্ন রুটে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ জালনোট প্রবেশ করানো হচ্ছে, এসব টাকার কাগজ আর বাংলাদেশের নোটে ব্যবহৃত কাগজ একই হওয়ার কারণে খালি চোখে এমনকি ব্যাংকের যাচাই মেশিনেও এসব নোট জাল হিসেবে চিহ্নিত করা দুরূহ। নিরাপত্তা সুতাসহ হলোগ্রাম প্রিন্ট সবই অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।


তিনি লেখেন, বিশেষ ব্যবস্থায় দেশটির নিজস্ব মুদ্রা ছাপানোর ফ্যাসিলিটিতে এসব নোট প্রিন্ট করা হয়েছে বলে বিশ্বস্ত মাধ্যমে জানা গেছে।  বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাত একপ্রকারের ধ্বংস করতে এবং বিভিন্ন নাশকতামূলক কার্যক্রমে অর্থায়নের জন্যে এসব নকল নোট অত্যন্ত কম মূল্যে দেশের জালনোট কারবারিদের কাছে বিশেষ ব্যবস্থায় পৌঁছে দিচ্ছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।  বাংলাদেশের বর্ডার গার্ডস, বিভিন্ন গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থা এ বিষয়ে অবগত, এবং নিজ সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ দিয়েই তারা এই অপতৎপরতা প্রতিরোধের চেষ্টা করে চলেছেন, পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও এ বিষয়ে কার্যকরী সচেতনতা তৈরি গুরুত্বপূর্ণ।


গত বুধবার মুন্সীগঞ্জের সুখবাসপুরে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘এবার পূজাকে বিঘ্ন করার জন্য পাহাড়ে এক ধরনের একটা ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু তাদের এ ষড়যন্ত্র কার্যকর হয় নাই। সেখানে একজনকে ধরা হয়েছিল। কিন্তু সে এ কাজের সঙ্গে জড়িতই ছিল না। কিছু সন্ত্রাসী তাকে জোর করে ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করে। পরে দেখা গেলো ওখানে কোনো রেপই (ধর্ষণ) হয় নাই। সেখানে একজন চাকমা ডাক্তার (ভিকটিমকে) পরীক্ষা করেছে। ওনাদের যে উদ্দেশ্য ছিল সেটা সফল হয় নাই।’


এছাড়া দুই দিন আগে তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে এক মারমা ছাত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনার জের ধরে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পেছনে ‘ভারতের ইন্ধন’ থাকতে পারে। এক সাংবাদিকদের বক্তব্য ছিল, ‘পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র, টাকার যোগান দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের এই পরিকল্পনা এবং বক্তব্য আসছে ভারতের যেন প্রদেশ হিসাবে নিয়ে যাওয়া হয়।’ এই বক্তব্যে সমর্থন জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘ভাই কিন্তু একটা সত্য প্রশ্ন করেছেন, ভারতের ইন্ধনে বা ফ্যাসিস্টদের ইন্ধনে এই ঘটনা ঘটাচ্ছে। এটা যেন ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিচ্ছি।’


সম্প্রতি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে শেখ হাসিনা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বিগত ১৬ বছরে দেশের ইতিহাস বিকৃত করে দেশবিরোধী অনেক চুক্তি করেছে। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে এখন শেখ হাসিনা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। এসময় তিনি আওয়ামী লীগ আর হিন্দুস্তান এখন একই পথের সাথী উল্লেখ করে বলেন, দেশপ্রেমিক সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভারতীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।


এছাড়া গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ফ্যাসিস্ট ও তাদের দেশি-বিদেশি দোসররা এখনো তৎপর। তারা ভারতে আশ্রয় নিয়ে ওই দেশের গণমাধ্যম, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতায় বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল আলম নীরব বলেছেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য ভারত গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। আমরা বলতে চাই ভারতের দাদাগিরি মানব না। ভারতের সব ষড়যন্ত্র আমরা প্রতিহত করব। দেশবাসীকে এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিএনপির এই নেতা বলেন, ভারতের সবচেয়ে বড় পণ্য শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়েছে। তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি দেওয়া হোক। কারণ আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা বসে নেই। তারা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিদায় হলেও তাদের প্রেতাত্মারা এখনো চক্রান্ত করছে।

সম্পাদকীয় :

প্রধান সম্পাদকঃ নাজমুল হক স্বপন
ফোনঃ +৮৮০২৪৭৭৭৮৭৫৫৬

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ শরীফুজ্জামান শরীফ

ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ শরীফুজ্জামান শরীফ

বার্তা সম্পাদকঃ শরীফুজ্জামান শরীফ


বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ

অফিসঃ পুলিশ পার্ক লেন (মসজিদ মার্কেটের ৩য় তলা) কোর্ট রোড, চুয়াডাঙ্গা।

ইমেইলঃ dailysomoyersomikoron@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১-৯০৯১৯৭, ০১৭০৫-৪০১৪৬৪(বার্তা-বিভাগ), ০১৭০৫-৪০১৪৬৭(সার্কুলেশন)