
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে দেশে নির্বাচন হবে। জনগণ সতঃস্ফুর্তভাবে ভোট দেবে। এটাই জনগণের সাথে বর্তমান সরকারের সামাজিক চুক্তি।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কে সামনে রেখে যত বাধাই আসুক জনগণ তা প্রতিহত করবে। এটাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন সরকারের বৈধতা ও জনগণের সামাজিক চুক্তি। বুধবার দুপুরে ঝিনাইদহ ডায়াবেটিক সমিতি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।’
ঝিনাইদহ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুন্সি কামাল আজাদ পান্নু, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমএ মজিদ, ঝিনাইদহ ডায়াবেটিক সমিতির সহসভাপতি জাহিদুজ্জামান মনা, আক্তারুজ্জামান ও জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘অনেকেই বর্তমান সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আপনাদের বলতে চাই, ২০০৯ সাল থেকে লাখ লাখ মানুষ রাজনৈতিক হামলা মামলার শিকার হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ গুম হয়েছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিদায়ে সাংবিধানিক সব পথ যখন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন দেশের ছাত্রজনতা জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। ছাত্র জনতার এই বিজয় দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ উন্মুক্ত করেছে। এই উন্মুক্ত পরিবর্তিত পরিস্থিতিই বর্তমান সরকারের বৈধতা দিয়েছে। দেশের জনগণ এই সরকারকে সেই ক্ষমতা দিয়েছে। কোনো পতিত স্বৈরাচারের যুক্তি জনগণের গণরায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে না।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘পৃথিবীর যত সভ্যতা আছে, সকল সভ্যতার মাধ্যমে যে-সব সরকার অতীতে গঠিত হয়েছে, তার মধ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সবচেয়ে বৈধ সরকার। যারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল, তারা আগামী নির্বাচন বানচালে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস সমাজ বদলের ইতিহাস, মানুষের সভ্যতার ইতিহাস। মানুষ যখন বন্যপ্রাণীর মতো বসবাস করতেন, হিংস্র ছিলেন, আত্মকেন্দ্রিক ছিলেন, তখন মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে সভ্যতার দিকে ধাবিত হয়েছেন। এভাবে ধাবিত হতে হতে মানুষ তাদের শাসককে মনোনয়ন দিয়েছেন। আর এই মনোনীত সাংবিধানিক আইন হলো ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনা সনদ। রসুল পাক (সা.) বিভেদ পূর্ণ জনগোষ্ঠীকে এককাতারে দাঁড় করিয়ে মদীনা সনদে স্বাক্ষর করেছিলেন। সুতরাং এটি একটি সামাজিক চুক্তি, রাজনৈতিক চুক্তি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের সমস্ত পথ যখন রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন জুলাই বিপ্লবের শহিদরা তাদের জীবন দিয়ে সেই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে জনগণ দেশের ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়েছিল। তারাই ঠিক করেছেন কে প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন, প্রধান বিচারপতি কে হবেন, বাংলাদেশ কীভাবে শাসিত হবে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে এসে যদি কোনো খুনি গোষ্ঠী সামনে চলে আসে তবে বাংলাদেশের জনগণ তার সমুচিত জবাব দেবে আইন সংগতভাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা হাসিনার বিচার করতে আসিনি, মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার করতে এসেছি। যে অপরাধের মধ্যে আছে পাঁচ বছরের শিশুকে হত্যা করা হয়েছে গুলি করে। যে বালক যে যুবকদের ছাত্র পানি দিচ্ছে তাকে গুলিবিদ্ধ করে মারা হয়েছে। রাজপথে দাঁড়িয়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন সে সবের বিচার করতে শেখ হাসিনার নাম উঠে এসেছে। তাই বিনা বিচারে কাউকে ছাড়া হবে না।’
অ্যাটর্নি জেনারেল তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘যারা বিভেদ তৈরি করার জন্য বলছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই ২৪ এবং ৭১ একই সূত্রে কথা। যারা আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছেন যারা পঙ্গুত্ব পালন করেছেন যারা সর্বস্ব হারিয়েছেন এই বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভূমিকা রেখেছেন এবং তাদের সবার ভূমিকাতেই আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে চাই। আগামী বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হবে। আগামী বাংলাদেশ আইনের শাসনের বাংলাদেশ হবে, যাতে করে আর কোনো মা বোনকে রাতের পর রাত তার স্বজন ফেরার প্রতীক্ষায় থাকতে না হয়।’